সপ্তাহান্তের বেড়ানো - কলকাতায় কাছাকাছি

এটি একটি সপ্তাহান্তের বেড়ানোর গল্প - একটি মনোরম রবিবারের বিকেল, খুব বেশি রোদও নয় বা খুব আর্দ্রও নয়। আমার দুই বছরের মেয়ে পুঙ্কাই আমার কাছে এসে বলল, "বাবুই (বাবা), আজ আমায় ঘোড়া দেখাতে নিয়ে চলো।" অন্য দিন দেখাবো, আজ থাক এসব বলার সুযোগই ও আমায় দিলো না। অগত্যা  আমি একজন ট্রাভেল এজেন্টের মতো ক্যাব বুক করে বেরিয়ে পড়লাম।  আমাদের রবিবারের আউটিং বা সপ্তাহান্তের বেড়ানো শুরু হয়ে গেলো। গাড়িতে উঠেই পুঙ্কাই ওর মাম্মামের (মা) এর কোলে রবিবার দুপুরের ঘুম টা ঠিক পুষিয়ে নিল।  দেখতে দেখতে আমরা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এ পৌঁছলাম। ৫টা বেজে গিয়ে সন্ধে হতেই চলেছিল, তাই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল গ্যালারি ও বন্ধ হয়ে গেছিলো। আমরা ঠিক করলাম পুঙ্কাইকে নিয়ে ভিক্টোরিয়া এর গার্ডেন টাই ঘুরিয়ে দেখাই।  

গ্র্যান্ড সানডে আউটিং-এর প্রথম অভিজ্ঞতা - ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল গার্ডেনে ঘোরাঘুরি:

 ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের চারপাশের লন জুড়ে অবাধে দৌড়াচ্ছে পুঙ্কাই। আমরা সেলফি তুলছিলাম, ঘাস র পাথর এর ওপর ছুটোছুটি আর অন্যানো কান্ডকারখানা দেখে  হেসে ফেলছিলাম । 

সপ্তাহান্তের বেড়ানো

সপ্তাহান্তের বেড়ানো

সপ্তাহান্তের বেড়ানোর ২য় অভিজ্ঞতা - ঘোড়ার গাড়ি চড়া:

কলকাতায় থাকলেও ভিক্টোরিয়ার বাইরে ঘোড়ার গাড়ি কখনোই আমরা চড়িনি।  মেয়ের আবদারে চড়তে হল।  ফিক্সড রেট হলেও ৫০০ টাকা দাম টা মনে হলো কিছুটা বেশি। গাড়িতে ওঠার আগেই পুঙ্কাইএর মুখ দিয়ে ফুলঝুরি ফুটছিল, ঘোড়াকে নিয়ে খেলবো, ওর পিঠে চড়ে দৌড়োবো, ঘোড়াকে ঘাস খাওয়াবো ব্লা ব্লা।  কিন্তু গাড়িতে উঠেই পুঙ্কাই আমার কোলে চুপটি করে বসে রইল।  হয়তো ভয় পাচ্ছিলো আর বসে বসে ওর চারপাশের জগৎকে প্রশস্ত চোখে দেখছিলো। ছোট রাইড হলেও বেশ ভালো লাগল। 

3য় অভিজ্ঞতা - পুঙ্কাইয়ের ঘোড়ায় চড়া:

আমাদের অ্যাডভেঞ্চারের পরবর্তী ছিল পুঙ্কাইয়ের প্রথম ঘোড়ার পিঠে চড়া। ও একটা ছোট্ট ঘোড়ার পিঠের ওপরে বসে কলকাতা ময়দানের সীমানার চারপাশে এক পাক ঘুরলো। সহিস দাদা টাও ঘোড়াটার মতোই ছোট,  তবে বাচ্চা ছেলেটি খুবই দক্ষতার সঙ্গেই ঘোড়াটিকে গাইড করেছিল। ১০০ টাকা দিয়ে এই মজাদার যাত্রাটা অবশেষে শেষ হল। পুঙ্কাই ও খুব খুশি ছিল। 

সপ্তাহান্তের বেড়ানো

4র্থ অভিজ্ঞতা - পুঙ্কাইএর ময়দানের ঘাসে দৌড়ানো:

কোলকাতা ময়দান, একটি বিস্তীর্ণ সবুজ জায়গা, গ্রীন কার্পেট এর  মতো চারদিকে ঘাস ছড়িয়ে আছে।  তার ওপর দিয়ে আমরা হাটছি, কখনো দৌড়োচ্ছি। অনেকেই ক্রিকেট ও ফুটবল খেলায় ব্যস্ত, পাশে ট্রাম লাইন দিয়ে ট্রাম যাচ্ছে।  এ এক দারুন অভিজ্ঞতা।  পুঙ্কাইকে এই মজাতে যোগ দিতে বাধা দিতে পারেনি বরং দেখেছি সে যাতে ঘাসের উপর অবাধে দৌড়াতে পারে, ঘাসে লেগে থাকা শিশির তার পায়ে সুড়সুড়ি দেয়, এবং সূর্যও  অস্তমিত হতে শুরু করে। 

সপ্তাহান্তের বেড়ানো

5ম অভিজ্ঞতা - মেরি-গো-রাউন্ড:

আমাদের আউটিং শেষ করার আগে, আমরা একটি ছোট মেরি-গো-রাউন্ডের সামনে থামলাম। আমাদের মেয়ে সাগ্রহে হাতলটা শক্ত করে ধরে রঙিন প্রাণীদের একটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। রাইডটি চারদিকে ঘোরার সঙ্গে সঙ্গেই  তার হাসিতে চারদিক ভরে উঠল, সন্ধে টাকে আরো আনন্দময় করে তুললো

ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে এল, এলো ফিরে যাওয়ার সময়। মাম্মাম সবার জন্য আইসক্রিম কিনে আমাদের সবাইকে অবাক করে দিলো । হাতে আইসক্রিম নিয়ে, আমরা ক্যাবে চড়েছিলাম, রেড রোড ধরে ক্যাব টা দৌড়োচ্ছিলো।  মনের মধ্যে রেখে দিলাম সারাদিনের স্মৃতিগুলো লালন করে। এই সপ্তাহান্তের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা মনের একটা বিশেষ জায়গায় রয়ে গেল। কলকাতার মধ্যে খুব সাধারণ একটা জায়গা আমাদের বিকেল টাকে অসাধারণ করে রাখল।  ভিডিও টা এখানে দিলাম। সবার ভালো লাগলে এরকম আরো অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।  

আপনারা অন্যান্য ব্লগ পোস্ট দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন। 

Debnath Ghosh

A passionate traveller , hobbyist Photographer.

3 Comments

Previous Post Next Post